শনিবার   ১৮ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১   ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

 ফরিদপুর প্রতিদিন
২৭০

বন্দিদের সুস্থ রাখতে নানা উদ্যোগ কারাগারে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪  

সারা দেশে বেশ কিছুদিন ধরে বিরাজ করছে তীব্র দাবদাহ। এতে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের অন্য কারাগারগুলোতেও এর প্রভাবে বন্দিদের ভোগান্তি বেড়েছে। দেশের ৬৮টি কারাগারে এই মুহূর্তে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে কারাগারগুলোতে যেন কোনো বিপর্যয় সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বন্দিদের সুস্থ রাখতে স্যালাইন-পানি সরবরাহ থেকে শুরু করে খাবারের মেন্যুতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। তীব্র গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে খাবারের মেন্যুতে এমন সবজির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বন্দিদের এক বেলার পরিবর্তে দুই বেলা গোসলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

কারা অধিদপ্তর জানিয়েছে, কারাগারগুলোতে বন্দি ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ৯৩৭। আর নারী ১৯২৯ জন। তবে এই মুহূর্তে কারাগারগুলোতে বন্দি রয়েছে ৭১ হাজার ২২৫ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৬৮ হাজার ৩১৫ এবং নারী ২৯ হাজার ১০ জন। একদিকে বন্দির চাপ, অন্যদিকে দাবদাহের অসহ্য গরম-এই দুই কারণে কারাগারগুলোতে সেবার মান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নারী বন্দি নিয়ে বিশেষভাবে ভাবছে কারা কর্তৃপক্ষ। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, বন্দিদের চাপ থাকলেও তা সামলে নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত গরমকে সামনে রেখে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দাবদাহ থেকে বন্দিদের রক্ষা করতে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারা ক্যাম্পাসে চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক উপস্থিতিও নিশ্চিত করা হয়েছে। কোনো বন্দি অসুস্থ বোধ করলেই তাকে তাৎক্ষণিক কারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগের তুলনায় কারাগারে সেবার মানও বেড়েছে। তবে পরিস্থিতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। এর কারণ হিসাবে অতিরিক্ত বন্দির চাপের কথা উল্লেখ করেছেন কারাসংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, প্রতিদিন যে হারে বন্দির জামিন হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি নতুন বন্দি কারাগারে ঢুকছে। কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির চাপ বেশি। কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গি ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আসামি রয়েছে। তাদের ওপর রয়েছে বিশেষ নজরদারি। বন্দির চাপ সামলাতে প্রতিনিয়ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বন্দি পাঠানো হচ্ছে কাশিমপুর কারাগারে।

কারা সূত্রে জানা গেছে, কারাগারে আটক নারী বন্দিদের সঙ্গে ৩৪১টি শিশুও রয়েছে। এদের মধ্যে ছেলে ১৫৭ ও মেয়ে শিশু ১৮৪টি। তাদের মায়েরা সাজাপ্রাপ্ত বা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বন্দি রয়েছেন। শিশু হওয়ার কারণে তারা মায়ের সঙ্গেই কারাগারে থাকছে। এসব শিশুর দিকেও বিশেষ নজর দিচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দেশের বিভিন্ন কারাগারে যুদ্ধাপরাধী রয়েছেন ১২৫ জন। এদের মধ্যে হাজতি ৮৬, কয়েদি (সাজাপ্রাপ্ত) ১১ জন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা ২৮ জন। তাছাড়া বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য রয়েছে ৫৭৪ জন। এদের মধ্যে জেএমবির ৪৩৩ ও অন্যান্য সংগঠনের জঙ্গি রয়েছে ১৪১। গরমে ‘রাজনৈতিক’ বন্দি, জঙ্গি, দুর্ধর্ষ আসামি এবং যুদ্ধাপরাধী বন্দিদের বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্ট কারাগারগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে কারা অধিদপ্তর।

ঢাকার আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গিদের মোবাইল ব্যবহারের তথ্য ফাঁস হয়। এরপর ঢাকার ডিআইজি প্রিজন ও কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে বদলি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসে কারা কর্তৃপক্ষ। নজরদারি বাড়ানো হয় জঙ্গিদের ওপর। সেখানে বসানো হয়েছে জ্যামার।

সারা দেশের কারাগারগুলোতে দায়িত্ব পালনের জন্য পুরুষ কারারক্ষী রয়েছেন আট হাজার ৫৬৫ জন। আর মহিলা কারারক্ষী মাত্র ৬১৭। প্রয়োজনের তুলনায় মহিলা কারারক্ষী একেবারেই অপর্যাপ্ত বলে জানিয়েছেন একাধিক কারা কর্মকর্তা। তারা জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন কারারক্ষী নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী, আট বন্দির জন্য একজন কারারক্ষী ডিউটিতে থাকার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে একজন কারারক্ষীকে এর চেয়েও বেশি বন্দির দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ ছাড়া কারাগারের ভেতরে তাদের জন্য কোনো বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই। তাই কারাগারে সেন্ট্রি পোস্ট স্থাপনসহ কারারক্ষীদের বিশ্রামের ব্যবস্থার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।

 ফরিদপুর প্রতিদিন
 ফরিদপুর প্রতিদিন
এই বিভাগের আরো খবর