শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

 ফরিদপুর প্রতিদিন
১২১

শতবর্ষে পদার্পন; গড়াই নদের তীরের লাঙ্গলবাঁধ বাজার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২১  

শতবর্ষে পদার্পন করেছে ঝিনাইদহ ও মাগুরার গড়াই নদের তীরের লাঙ্গলবাঁধ বাজার। খুলনা বিভাগের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ বাজার এটি। উল্লিখিত জেলা দুটি ছাড়াও নদের অপর পাড়ে রাজবাড়ীর বিরাট একটা অংশের মানুষের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই বাজার।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা, মাগুরার শ্রীপুর ও রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার গড়াই নদের সংযোগস্থলে লাঙ্গলবাঁধ বাজারটি অবস্থিত। শতবর্ষের বেশি পুরনো এ বাজার।

জনশ্রুতি আছে, লাঙ্গলবাঁধ বাজারটি বর্তমান স্থানে আসার আগে তা মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাশালিয়া গ্রামে চালু হয়। সময়টি ব্রিটিশ আমলের। তখন এর নাম ছিল মাশালিয়া বাজার। মাশালিয়া বাজারটি বর্তমান হাট থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ছিল। মাশালিয়ায় বাজার থাকাকালীন পার্শ্ববর্তী শ্রীপুর উপজেলার শ্রীকোল জমিদারদের সঙ্গে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া ইউপির আলফাপুর জমিদারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত বাধে। 

দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে এ সমস্যা। এতে লাঙ্গলবাঁধ বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা গড়াই নদীর অপর প্রান্তে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সাওরাইল জমিদাররা অপ্রসন্ন হন। 

বর্তমান লাঙ্গলবাঁধ বাজারটি শৈলকুপা, শ্রীপুর ও পাংশা উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত হলেও জায়গাটি সাওরাইল জমিদারির অংশ ছিল। যেহেতু বাজারটির অস্তিত্ব বিলীন হতে যাচ্ছিল, তাই সাওরাইল জমিদার তৎকালীন শ্রীকোল ও আলফাপুর জমিদারদের কবল থেকে বাজারটি রক্ষা করতে নিজস্ব জমি লাঙ্গলবাঁধে তা স্থানান্তর করেন। প্রসঙ্গত, এর মধ্য দিয়ে শ্রীকোল ও আলফাপুর জমিদারদের ক্ষমতা খর্ব হয়।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা, মাগুরার শ্রীপুর ও রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার গড়াই নদের সংযোগস্থলে লাঙ্গলবাঁধ বাজারটি অবস্থিত। শতবর্ষের বেশি পুরনো এ বাজার।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা, মাগুরার শ্রীপুর ও রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার গড়াই নদের সংযোগস্থলে লাঙ্গলবাঁধ বাজারটি অবস্থিত। শতবর্ষের বেশি পুরনো এ বাজার।


ওই সময় নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়া করতেন ব্যবসায়ীরা। তখনকার দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত নৌকা কিংবা জাহাজের মাধ্যমে চলতো। কুষ্টিয়া সদর, কুমারখালী, খোকসা, রাজবাড়ীর পাংশা, মাগুরা, এমনকি যশোর থেকেও ব্যবসায়ীরা আসতেন পণ্য কেনাবেচা করতে। পরবর্তী সময়ে পণ্যের পরিমাণ ও জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত কলোনিতেও সম্প্রসারিত হয় বাজারটি। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার পর এখন ট্রাকযোগেও পণ্য পরিবহন করা হয়।

বাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১২০০ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৫ ভাগ দোকানই পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পাট, ধান, গম, পেঁয়াজ প্রভৃতি কৃষিপণ্য বিক্রি হয় এখানে। এছাড়া রড, ঢেউটিন, সিমেন্ট প্রভৃতি পাইকারি ও খুচরা বেচাকেনার জন্য প্রসিদ্ধ এ হাট। মৌসুমে লাঙ্গলবাঁধ বাজারে ১০ থেকে ১২ হাজার মণ পাট, আট থেকে ১০ হাজার মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়। মৌসুম ছাড়াও বছরের অন্য সময়ে প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায়। বাজারটিতে কাপড়ের ব্যবসাও চলছে প্রায় ৫০ বছর ধরে। তবুও ঐতিহ্যবাহী বাজারটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কিছুটা হলেও থেমে আছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সাধারণ মানুষের চাহিদার কারণে এর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও।

শুধু বাজার হিসেবেই বিখ্যাত নয় লাঙ্গলবাঁধ। বর্তমানে রোববার ও বৃহস্পতিবার বিশেষ হাট বসে এখানে। ওই দুদিন রমরমা হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সপ্তাহে ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকার মতো লেনদেন হয় এখানে। 

 ফরিদপুর প্রতিদিন
 ফরিদপুর প্রতিদিন
এই বিভাগের আরো খবর