বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১   ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নগরকান্দায় নিহত নারী শ্রমিক মনিরা হত্যার রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ

নগরকান্দা প্রতিনিধি

ফরিদপুর প্রতিদিন

প্রকাশিত : ০৩:৫১ পিএম, ৬ মে ২০২৩ শনিবার

ফরিদপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া পাটকলের নারী শ্রমিক মনিরা আক্তারের (২৬) হত্যা রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত মনিরার স্বামী মো. সাহেব আলী (৩৮) ও সতিন জ্যোৎস্না বেগমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ‘ক্রমাগত পারিবারিক কলহ ও প্রথম স্ত্রীর প্ররোচনায় মনিরাকে খুন করেন স্বামী সাহেব আলী।’

শনিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন। এতে বলা হয়, গত ২৩ এপ্রিল রবিবার দুপুরে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানিকনগর সেতুর পাশ থেকে মনিরার মরদেহ উদ্ধার করে করা হয়।

মনিরা নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার ভোগডুবরি গ্রামের জাফর হোসেন ও রোকেয়া বেগমের মেয়ে। তিনি ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা এলাকায় জোবায়দা-করিম জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তিন বছর আগে তার সঙ্গে নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের কোনাগ্রামের সাহেব আলীর বিয়ে হয়। ১২ বছর আগে সাহেব আলী জ্যোৎস্না বেগমকে বিয়ে করেন।

জ্যোস্নার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কহলদিয়া গ্রামে। সাহেব আলী ১০ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। জ্যোস্নার সঙ্গে সাহেব আলীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে এ কথা বলে তিনি মনিরাকে বিয়ে করেন। তিনি অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

পুলিশ জানায়, মনিরাকে বিয়ে করলেও সাহেব আলী কোনাগ্রামে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। অপরদিকে মনিরা বাখুন্ডা এলাকায় তার ফুপু ফুলজান খাতুনের সঙ্গে থাকতেন। ফুলজান খাতুন ওই পাটকলে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন জানান, সাহেব আলীর সঙ্গে মনিরার পারিবারিক সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তিনি (সাহেব আলী) মনিরাকে নানা বিষয়ে সন্দেহ করতেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন বিদেশ থেকে আসার পর সম্প্রতি তার প্রথম স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমের সঙ্গে সাহেব আলীর যোগাযোগ বাড়ে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এ অবস্থায় পারিবারিক কলহ ও প্রথম স্ত্রীর প্ররোচণায় সাহেব আলী তার দ্বিতীয় স্ত্রী মনিরাকে গত ২২ এপ্রিল বিকেলে বেড়াতে বের হওয়ার কথা বলে তালমা ইউনিয়নে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানিকনগর সেতুর পাশে রতনের পুকুর পাড়ে নিয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে এবং গলা, বুক ও পেটে ছুরি মেরে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত শুক্রবার ভোরে ঢাকার দোহার থানা এলাকা থেকে সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কহলদিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে সাহেব আলী প্রথম স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বর্তমানে জেল হাজতে রায়েছেন। এছাড়া যে ছুরি দিয়ে মনিরাকে হত্যা করা হয় সেটিও পুলিশ উদ্ধার করেছে।

মনিরা হত্যার ঘটনায় ফুপু ফুলজান খাতুন বাদী হয়ে গত ২৩ এপ্রিল নগরকান্দা থানায় একটি হত্যা মামলাদায়ের করেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরকান্দা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ মন্ডল বলেন, শনিবার দুপুরে সাহেব অলীকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে পরে তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।