শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন মাগুরার ইতি-সাথির পরিবার

নিউজ ডেস্ক

ফরিদপুর প্রতিদিন

প্রকাশিত : ০৫:৫১ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ বুধবার

সাফ অনুর্ধ্ব-১৯ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের দুই খেলোয়াড় মাগুরার ইতি এবং সাথি। নেপালকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বিজয়ী দলের সদস্য হওয়ায় মাগুরার সর্বত্র এখন একসাথে উচ্চারিত হচ্ছে ইতি-সাথির নাম। গৌরব বোধ করছেন সকলেই। অনেকেই প্রশংসার স্তুতিবাক্য নিয়ে যাচ্ছেন তাদের পরিবারে।

ইতি রাণী মণ্ডল (১৭) এবং সাথি বিশ্বাস (১৬) মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোয়ালদহ গ্রামের সন্তান। তাদের ফুটবল খেলা শুরু গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকে বিকেএসপি হয়ে এখন জাতীয় দলের সদস্য তারা।

বাংলাদেশ দলে ইতি-সাথি খেলেন গোল পজিশনে। দুজনই বড় হয়েছেন দরিদ্র পরিবারে। প্রথম দিকে মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে এলাকার অনেকেই নেতিবাচক কথা বললেও এখন আবার তারাই প্রশংসা করছেন। “আমাদের মেয়ে” বলে বড়মুখ করে গর্ববোধ করার সুযোগ পেয়েছেন। গৌরববোধ করছেন ইতি-সাথির পরিবারের সদস্যরাও।

ইতি রানী মণ্ডলের বাবা মনোজিৎ কুমার মণ্ডল। পেশায় একজন ভ্যানচালক। পাশাপাশি ডেকোরেটরের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২০ শতক জমিতে ছোট দুটো টিনের ঘর আছে তার। মাঠে কোনো জায়গা জমি নেই। ভ্যান চালিয়ে ও দিনমজুরের কাজ করে চার মেয়ের তিনজনকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে ইতি রানী মণ্ডল বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের সদস্য।

মনোজিৎ কুমার বলেন, ‘ইতি ফুটবল না খেললে তাকে বিয়ে দেয়া হতো। হয়তো শ্বশুর বাড়িতে ঘর করতে হতো। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের নিয়ে নানা রকম দুশ্চিন্তায় ভুগতে হয় বাবা–মায়ের। কিন্তু এখন সে দেশের জন্যে খেলছে। সেই দুশ্চিন্তা কেটে গেছে।

সাথির বাবা বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস। স্থানীয় বাজারে একটা ছোট স্টুডিও আছে। সেখান থেকে উপার্জিত আয়েই চলে তাদের সংসার।

বিদ্যুৎ বিশ্বাস বলেন, ‘আমার মেয়ে এতদূর যাবে ভাবিনি। দেশ–বিদেশে খেলছে এটি বিশাল কিছু মনে হয়। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিল সাথি। তবে সাফ খেলতে যাওয়ার কারণে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি সে।’

উভয় পরিবারই মেয়েদের কৃতিত্বের জন্যে গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস রঞ্জন দেবজ্যোতি ও সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলামের প্রশংসা করেছেন। তাদের উদ্যোগে এলাকায় মেয়েদের ফুটবল খেলা ও অনুশীলন শুরু হয়। কয়েক বছর ধরে সকাল–বিকেল দুই বেলা বিদ্যালয়ের মেয়েদের ফুটবল অনুশীলন করিয়ে যাচ্ছেন এই দুই শিক্ষক। যাদের কারণেই বাংলাদেশ দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন ইতি-সাথি।

গোয়ালদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস রঞ্জন দেবজ্যোতি বলেন, মেয়েরা নিজেদের গ্রামসহ মাগুরার নাম উজ্জ্বল করেছে, এতেই আমি খুশি। তাদের পথ ধরে মাগুরায় আরো অনেক মেয়ে খেলোয়াড় তৈরি হবে সেই প্রত্যাশা রয়েছে।

মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম নিজের ফেসবুক আইডিতে সাফ জয়ী দলের সদস্য মাগুরার দুই নারী ফুটবলারকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের সম্মান জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন।