শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

থ্যালাসেমিয়া: লক্ষণ এবং প্রতিরোধ

নিউজ ডেস্ক

ফরিদপুর প্রতিদিন

প্রকাশিত : ১২:১০ পিএম, ৮ মে ২০২২ রোববার

প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা হয় বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সব দিবস পালিত হয়। বিশ্বে পালনীয় সেই সব দিবসগুলোর মধ্যে একটি হলো বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। 

প্রতি বছর ৮ সারা বিশ্বে ' বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস ' হিসেবে পালিত হয়। সমগ্র বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এই দিনটি পালন করা হয়। মূলতঃ এই জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছে তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এবং এই রোগটির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।

২০০৯ সালে প্রথম এই দিবসটি পালন করা হয়। থ্যালাসেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অথবা সংক্ষেপে TIF এর উদ্যোগে এই দিনটি পালন করা শুরু হয়। থ্যালাসেমিয়া একটি রক্তঘটিত রোগ, এই রোগের ফলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। 

সাধারণত তিন ধরনের থ্যালাসেমিয়া হয়- আলফা থ্যালাসেমিয়া , বিটা থ্যালাসেমিয়া ও থ্যালাসেমিয়া মাইনর। 

সাধারণভাবে আলফা থ্যালাসেমিয়া কম তীব্র, এক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়। অন্যদিকে বিটা থ্যালাসেমিয়ায় রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া হলে রক্তে লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুব কমে যায়, যার ফলে আনিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দেয়। 

থ্যালাসেমিয়া একটি জিনগত রোগ। বাবা এবং মা দুজনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে তাদের সন্তানের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই রোগের লক্ষণ সমূহ হলো -  

থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গ থ্যালাসেমিয়া রোগের ধরনের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। বিটা থ্যালাসেমিয়া এবং কিছু ধরনের আলফা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুর মধ্যে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে এর পরে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক থ্যালাসেমিয়া হলে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে- 

থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ

চোখের রং হলদে হয়ে যাওয়া

চোখের রং হলদে হয়ে যাওয়া

>>> থ্যালাসেমিয়া রোগের কারণে শিশুদের জন্ডিস হতে পারে এবং তাদের ত্বক ফ্যাকাশে দেখাতে পারে।

>>> থ্যালাসেমিয়া হলে অনেক বেশি পরিমাণে তন্দ্রা লেগে থাকা ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

>>> থ্যালাসেমিয়ার কারণে বুকে ব্যথা হতে পারে।

>>> হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

>>> নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

>>> থ্যালাসেমিয়ার কারণে পায়ে ক্রাম্প হতে পারে।

>>> থ্যালাসেমিয়া হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।

>>> অনেক সময় থ্যালাসেমিয়া হলে শিশুরা আর খেতে চায় না বা খাবারে অনীহা দেখা দিতে পারে।

>>> থ্যালাসেমিয়ার কারণে শিশুদের বৃদ্ধিতে বিলম্ব দেখা দিতে পারে বা শিশুরা ঠিক মতো বেড়ে ওঠে না।

>>> চোখের রং হলদে হয়ে যাওয়া।

>>> খাওয়াতে অরুচি দেখা দেয়।

>>> অনেক সময় মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।

>>> মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

>>> ইনফেকশন বা সংক্রমণে সহজেই প্রভাবিত হওয়া এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

চিকিৎসা
রক্ত পরিসঞ্চালনই থ্যালাসেমিয়ার মূল চিকিৎসা। শরীরে আয়রন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আয়রন চিলেশনের ওষুধ দিয়ে তা কমাতে হয়। প্লীহা বড় হয়ে গেলে অস্ত্রোপচার করে তা কেটে ফেলতে হয়। এতে রক্ত গ্রহণের হার কিছুটা কমে আসে। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন হলো এ রোগের স্থায়ী চিকিৎসা। জিন থেরাপিও আরেকটি উন্নত চিকিৎসা।

প্রতিরোধে করণীয়
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতা খুব জরুরি। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে দুজন বাহকের মধ্যে বিয়ে এড়াতে পারলে থ্যালাসেমিয়ার হার কমানো সম্ভব। আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে সন্তান গর্ভে আসার পর চিকিৎসকের পরামর্শে বিশেষ উপায়ে গর্ভস্থ শিশুর থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা যায়।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য কিছু ঘরোয়া উপায়

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য কিছু ঘরোয়া উপায়

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য কিছু ঘরোয়া উপায়

আসলে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হলে তেমন কোনো ঘরোয়া উপায় নেই এটি প্রতিরোধের জন্য। তবে অবস্থার যেন আরো অবনতি না ঘটে সেটার জন্য কিছু পরিবর্তন আনতে পারি।

অতিরিক্ত আয়রন গ্রহন না করা
অতিরিক্ত আয়রন গ্রহন থেকে বিরত থাকা। যতদিন না ডাক্তার আপনাকে রেকমেন্ড করে ততদিন আয়রন সমৃদ্ধ ভিটামিন গ্রহণ করবেন না।

স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য
ব্যালেন্সেড ডায়েট যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এমন খাদ্য খাওয়া উচিত। এতে আপনার এনার্জি লেভেল বজায় থাকবে। চিকিৎসকেরা সাধারণত ফলিক এসিড গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এতে আপনার শরীরে নতুন রক্ত কনিকা তৈরি হয়। এছাড়াও দেহের হাড়ের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি আর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।

ইনফেকশন থেকে দূরে থাকুন
নিজেকে ইনফেকশন থেকে নিরাপদ রাখার জন্য সব সময় সাবান দ্বারা হাত পরিষ্কার করুন বিশেষ করে আপনার শরীর থেকে যদি স্প্লিন কেটে বাদ দেওয়া হয়ে থাকে এবং জ্বর সর্দি বা ছোঁয়াচে অসুখে অসুস্থ মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকুন। মেনিন জাইটিস, হেপাটাইটিস বি এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন ইনফেকশন থেকে বাঁচার জন্য।

গর্ভধারণের পূর্বে টেস্ট
যদি একজন নারী অথবা তার স্পাউসের বংশে থ্যালাসেমিয়ার হিস্ট্রি থেকে থাকে তাহলে গর্ভধারণের আগে অবশ্যই ব্লাড টেস্ট করা উচিত। রক্ত পরীক্ষা আর ফ্যামিলি জেনেটিক পর্যবেক্ষণ করে জানা যাবে ২ জনের কেউ থ্যালাসেমিয়ার শিকার অথবা ক্যারিয়ার কিনা।

বিয়ের আগেই ব্লাড টেস্ট
যদিও এই পদ্ধতি আমাদের সমাজে এখনও প্রচলিত নয়, তবুও আমাদের উচিত নিজেদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে বিয়ের আগে হবু বর এবং বউয়ের রক্ত পরীক্ষা করা।

তবে আশার কথা হচ্ছে গবেষকরা থ্যালাসেমিয়া প্রতিকারের জন্য স্টাডি করে যাচ্ছেন। খুব শিগগির হয়তো ষ্টীম সেল আর জিন থেরাপির মাধ্যমে এর প্রতিকার সম্ভব হবে।