শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

সালথায় আ.লীগের প্রতিনিধি দলের সহিংসতার স্থান পরিদর্শন

নিউজ ডেস্ক

ফরিদপুর প্রতিদিন

প্রকাশিত : ১১:৩৭ এএম, ৯ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

ফরিদপুরের সালথায় গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করে সরকারি বিভিন্ন অফিসে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের স্থান পরিদর্শন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। 

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সহিংসতার স্থানগুলো পরিদর্শন করে এই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। 

কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি এই দলে ছিলেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান এমপি, মো. আব্দুর রহমান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, এসএম কামাল এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার দীলিপ বড়ুয়া।

এছাড়াও ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকট সুবল চন্দ্র সাহা, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফারুক হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আ'লীগ নেতারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অফিস, সরকারি বাসভবন ঘুরে দেখেন। এর আগে উপজেলা চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

সেই সমাবেশে বক্তারা হেফাজতে ইসলামকে এদেশের নব্য রাজাকার উল্লেখ করে বলেন, সালথায় তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতের সঙ্গে তাদের দোসর বিএনপি জামায়াতের লোকেরা জড়িত। এদেশকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা এ হামলা চালিয়েছে। 

সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি বলেন, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। আমরা প্রশাসনকে বলেছি ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করুন। নিরীহ কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়। আর জড়িতদের মধ্যে যদি আওয়ামী লীগের কেউও থাকে তাকেও যেন রেহাই দেওয়া না হয়।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আব্দুর রহমান বলেন, স্থানীয় একজন হেফাজত নেতা হেফাজত ও বিএনপি জামায়াতের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই হামলায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে। আমরা দেশের সকল স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাই। এখনই তাদের বিষদাঁত ভেঙে না দিলে চড়া মূল্য দিতে হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ বলেন, যারা দেশের উন্নয়ন আর অগ্রগতি বিশ্বাস করে না তারাই এই হামলা চালিয়েছে। দেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান বানাতে চায় এই উগ্র মৌলবাদীরা। পরিকল্পিতভাবে যারা এই হামলা চালিয়েছে এবং নেপথ্যে যারা ছিলো তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, যারা দেশকে অশান্ত করতে চাইছে তারা স্বাধীনতাবিরোধী। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় করোনা মোকাবিলায় কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করতে দুই আনসার সদস্য ও ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে সালথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান হিরামণি স্থানীয় ফুকরা বাজারে যান। সেখানে তিনি যাওয়ার পর মানুষের জটলা সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তিনি ওই স্থান থেকে ফিরে আসেন এবং সেখানে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পাঠান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত জনতা মিজানুর রহমানের ওপর হামলা চালায়। এতে তার মাথা ফেটে যায়।

পরে স্থানীয় জনতা পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত ও বাহিরদিয়া মাদরাসার মাওলানা আকরাম হোসেন এবং জনৈক আরেক মাওলানার গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে দেয়। গুজবে কান দিয়ে হেফাজত, বিএনপি ও জামায়াতপন্থী হাজারো মানুষ গিয়ে থানা ঘেরাও করে। সেই সঙ্গে উপজেলা পরিষদ, থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন, উপজেলা কৃষি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে সালথা থানা পুলিশের পাশাপাশি ফরিদপুর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা ও নগরকান্দা পুলিশ এবং র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা যৌথভাবে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) ও মিরান মোল্লা (৩৫) নামের দুই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এদিকে সহিংসতার ঘটনায় ৪ হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার সকাল ৮টার দিকে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে আসামি হিসেবে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৪ হাজার জনকে। ইতোমধ্যেই এজাহারভুক্ত ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অপরদিকে সালথায় তাণ্ডবের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের দু'টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর একটিতে প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলীকে অপর কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আসলাম মোল্লাকে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।