মধ্যপন্থাই মুমিন মুসলমানের বৈশিষ্ট্য
প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২৩

উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ, খুনখারাবি, ছিনতাই, দুর্নীতিকে কখনো ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানবতার ধর্ম।
উগ্রবাদ নয়, সন্ত্রাস নয়, দাওয়াতই হচ্ছে ইসলামের সঠিক পথ। আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে নাজাতের পথ দেখাতেই মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমগ্র মানব জাতির পথ প্রদর্শক হিসেবে রাসূল করে পাঠিয়েছিলেন। তিনি দাওয়াতের মাধ্যমেই মানুষকে মহান আল্লাহর পথে আহ্বান করেছিলেন।
নবী (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা সার্বিকভাবে সুচারুরূপে গড়ে তুলেন সব মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার মতো করে। তিনি (সা.) পরিস্থিতি বুঝে হিকমাতের মাধ্যমেই মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন। মহান আল্লাহর পথে চলার পথ দেখিয়েছেন মহান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশেই। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
অর্থ: ‘(হে রাসূল!) আপনি মানুষকে আপনার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান করুন হিকমত ও সৎ উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলুন উত্তম পন্থায়। আপনার প্রতিপালকের পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয় সে সম্পর্কে তিনি সবিশেষে অবহিত আছেন এবং কারা সৎ পথে আছে সে বিষয়ও তিনি সম্যক অবহিত। (সূরা: আন নাহল, আয়াত: ১২৫)।
দাওয়াতের পথই হচ্ছে ইসলামের প্রকৃত পথ। উগ্রতা, সন্ত্রাস, তথাকথিত জিহাদ করে ইসলামকে এগিয়ে নেয়ার কোনো নির্দেশনা, অনুমতি পবিত্র কোরআনে কিংবা সহিহ হাদিসের কোথাও উল্লেখ নেই। ভ্রান্ত পথের ভ্রষ্ট ‘আকিদায়ে বিপথগামী কিছু তরুণ-যুবক ইসলামের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে উগ্রতাকে লুফে নিয়েছে জান্নাত প্রাপ্তির আশায়। আসলে উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা কোরআন সুন্নাহর জ্ঞানে অপরিপক্ব ও নির্বোধ। তাদেরকে ভুলপথে পরিচালিত করে ধোঁকায় ফেলে তথকথিত জিহাদের প্রলোভনে আকৃষ্ট করা হয়।
ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জুলুম ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ
অর্থ:‘ফিতনা বা সন্ত্রাস হত্যার চেয়েও ভয়াবহ।’(সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ১৯১)।
মানুষ হত্যা নিষেধ করে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,
أَنَّهُ مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
অর্থ: ‘কেউ কাউকে নরহত্যার অপরাধ অথবা পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টির কারণ ব্যতীত হত্যা করলে সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণ বাঁচালে সে যেন গোটা মানবজাতিকে বাঁচালো।’ (সূরা: আল মায়িদাহ, আয়াত: ৩২)।
নবী (সা.) বলেছেন, শেষ জামানায় এমন একটি গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে বয়সে নবীন, বুদ্ধিতে অপরিপক্ব ও নির্বোধ। তারা পবিত্র কোরআন পাঠ করবে কিন্তু তা তাদের কন্ঠনালীও অতিক্রম করবে না। (অর্থাৎ-হৃদয় স্পর্শ করবে না) তারা সৃষ্টির সেরা মানুষের কথাই বলবে কিন্তু দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়। (আত তিরমিযী)।
বিদায় হজের সময় মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে নবী (সা.) বলেন, শুনে রাখো! মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। সাবধান! আমার পরে তোমরা একজন আরেকজনকে হত্যা করার মতো কুফরি কাজে লিপ্ত হয়ো না। আল্লাহ তাআলা এবং নবী (সা.) এর সতর্কবাণী মান্য করে চললে সমাজের বুকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। উগ্রতা, যুলুম, সন্ত্রাস পরিহার করে হিকমাত ও কৌশল প্রয়োগ করে বিনয়-নম্রতা সহকারে মানুষকে মহান আল্লাহর পথে আহ্বান করাই শ্রেষ্ঠ দাওয়াত। ইসলামে কোনো জবরদস্তির বিষয় নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لاَ إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ
অর্থ: ‘দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই।’ (সূরা: আল বাকারাহ, ২৫৬)।
নীতি, কর্ম আদর্শ ও দর্শনে একপেশে নয় ও চরম পন্থাও নয় বরং ভারসাম্যপূর্ণ থাকাটাই মুসলিমের তথা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ
অর্থ: ‘যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুগঠিত করেছেন এবং তোমাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন।’ (সূরা: আল ইনফিতার, আয়াত: ৭)।
ইবাদতের ক্ষেত্রেও মুমিনের জন্য একটা ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে। কোনো ব্যাপারেই অতিরঞ্জন আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। সংসার বিবাগি হয়ে সন্ন্যাসী জীবনও যেমন কাম্য নয় তেমনি দ্বীনের ইবাদত থেকে সম্পূর্ণ গাফেল হয়ে মহান আল্লাহকে অমান্য করে কুফরির জীবন বাঞ্ছনীয় হতে পারে না। সংসার, পরিবার, পরিজন সমভিব্যবহারে সবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
ادْعُواْ رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً إِنَّهُ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
অর্থ: ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ডাক বিনীতভাবে ও গোপনে। নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা: আল আরাফ, আয়াত: ৫৫)।
দ্বীনের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই সব ধরনের ইবাদত বন্দেগি চালিয়ে যেতে হবে। কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি মহান আল্লাহর পছন্দ নয়। ক্রোধের কারণে কর্কশ স্বরে গাল-মন্দ করা, চিৎকার-চেচামেচি, কলহ, বিবাদ-বিসম্বাদ না করে ধৈর্য-সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে সবার কাছে প্রিয়ভাজন হয়ে নিজের ঈমান ঠিক রাখতে হবে। মহান আল্লাহকেও ডাকতে হবে বিনীতভাবে, চিৎকার করে, উচ্চকন্ঠে, হুকুমের স্বরে, ধমকের স্বরে, কি কখনো কারোর কাছে কিছু চাওয়া যায়? আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلاَ تَجْهَرْ بِصَلاَتِكَ وَلاَ تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلاً
অর্থ: ‘তোমার সালাতে স্বর উঁচু করো না এবং একেবারে নিচুও করো না এবং এর মাঝে একটি পথ (অর্থাৎ-মধ্যপন্থা) তালাশ করো।’ (সূরা: আল ইশরা, আয়াত: ১১০)।
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
অর্থ: ‘পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (সূরা: লুকমান, আয়াত: ১৯)।
জীবনের সবক্ষেত্রে কোনো বাড়াবাড়ি অপব্যয় অপচয় অহেতুক বিলাসিতা যেমন করা যাবে না তেমনি একেবারে কৃপণতাও করা যাবে না। যখন যেখানে যেমন দরকার তখন সেখানে তেমনটাই বিচার-বিবেচনা প্রসূতভাবে সম্পাদন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا
অর্থ: ‘যারা, যখন ব্যয় করে তখন অপচয় করে না এবং কৃপণতাও করে না এবং তারা এর মাঝে মধ্যপন্থি।’ (সূরা: আল ফুরকা, আয়াত: ৬৭)।
ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, নবী করিম (সা.) একদা সাদ (রা.)-কে ওজু করার সময় অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতে দেখে বললেন, হে সাদ! এ অপচয় কেন? তখন তিনি বললেন, ওজুতেও কি অপচয় আছে?
রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ, যদিও তুমি একটি প্রবহমান নদীতে থাকো। (সহিহ বুখারি)।
বিনয় মানুষের ভূষণ আর ভদ্রতা-ভব্যতা ও নম্রতা বিনয়ীদের মাঝেই পরিদৃষ্ট হয়। যার মধ্যে যত বেশি বিনয় পাওয়া যাবে, সে তত বেশি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। যারা মহান আল্লাহর হুকুম বিনয় ও ধৈর্যসহকারে পালন করে তারা শ্রেষ্ঠ বিনয়ী এবং তাদের বন্ধু আল্লাহ তাআলা। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
অর্থ: ‘তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তার রাসূল ও মুমিনরা যারা ভূষণ হয়ে সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয়।’ (সুরা: আল মায়িদাহ, আয়াত: ৫৫)।
তিনি আরো ওয়াদা করেছেন,
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ وَأَخْبَتُواْ إِلَى رَبِّهِمْ أُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ الجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থ: ‘যারা মুমিন, সৎকর্মপরায়ণ এবং তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়াবনত, তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।’ (সূরা: হুদ, সুরা: ২৩)।
অহংবোধ ও হামবড়া ভাব যার মধ্যে থাকে তাকে কেউ পছন্দ করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
অর্থ: ‘রহমান এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে বিনয় হয়ে চলে।’(সূরা: আল ফুরকান, আয়াত: ৬৩)।
নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তিই মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে বিনয় অবলম্বন করে, আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। (সহিহ মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজে বিনয় অবলম্বনকারী, তিনি বিনয়কে পছন্দ করেন। তিনি বিনয় অবলম্বনকারীকে এত বেশি দান করেন যা কোনো লোককে দান করেন না। (সহিহ মুসলিম)।
সর্বোপরি একজন মানুষের গুণ হলো তার ঈমান খাঁটি ও শির্কমুক্ত হতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,খাঁটি মুসলমান (মুমিন) ওই ব্যক্তি যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। মুমিন বান্দার চলন, বলন, আচার-আচরণ এবং তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সবাইকে তার প্রতি শ্রদ্ধার আসনে বসায়। মুমিন কটু কথা বলতে জানে না, কুদৃশ্য দেখে না, মিথ্যা বলে না। অসততা, দুর্নীতিমুক্ত থেকে অবনত মস্তকে সরল মনে এবং নিরহকারী হয়ে জীবন কাটায় ও পথ চলে।
অহংকার, রাগ, কলহ-বিবাদ পরিহার করে চলাটাই মুমিনের গুণ হওয়া উচিত। অহংকারীকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। রাগকে হারাম বলা হয়েছে। অহংকারীদের জন্য মহান আল্লাহর সাবধান বাণী,
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই যারা অহংকার করে আমার ইবাদত হতে বিরত থাকে, শীঘ্রই তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা: আল মুমিন, আয়াত: ৬০)।
কোনো অহংকারীকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। সূরা লুকমান এ অহংকার সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা লুকমান (আ.) এর বয়ানে তার পুত্রের প্রতি উপদেশ দিয়েছেন এভাবে,
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
অর্থ: ‘এবং মানুষের প্রতি অহংকারভরে তোমার গাল ফিরাবে না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো উদ্ধত ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না।’ (সূরা: লুকমান, আয়াত: ১৮)।
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসুদ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। জনৈক ব্যক্তি বললেন, (হে আল্লাহর রাসূল (সা.)!) প্রত্যেক ব্যক্তিই পছন্দ করে যে, তার পোশাক ও জুতা সুন্দর হোক। রাসূল (সা.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। অহংকার হলো, সত্য বলার ক্ষেত্রে অহমিকা পোষণ করা এবং মানুষকে অবজ্ঞা করা। (সহিহ মুসলিম)।
রাগ বা ক্রোধ মানুষকে বর্বর করে ফেলে। রাগের কারণে মারা-মারি, কলহ-বিবাদ এমনকি খুনা-খুনি পর্যন্ত সংঘটিত হয়ে যেতে পারে, এ কারণে রাগকে আল্লাহ তাআলা মমিনের জন্য হারাম করেছেন। ক্রোধের পরিবর্তে ক্ষমা ও ধৈর্য মানুষের জন্য সাফল্য বয়ে আনে। ভারসাম্যপূর্ণ জীবনেই উত্তম জীবন। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারা বীরত্বের লক্ষণ।
রাসূল (সা.) বলেছেন, প্রকৃত শক্তিধর সে নয় যে অন্যকে কুস্তিতে ধরাশায়ী করে বরং প্রকৃত শক্তিধর সে ব্যক্তি যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)।
কলহ-বিবাদ, মারামারি, ক্রোধ, খুনাখুনি- এগুলো সংঘটিত হয় কখন? যখন স্বার্থের প্রশ্ন এসে যায়। লোভ-লালসা,হিংসা-বিদ্বেষ মানুষকে একে অন্যের সঙ্গে হানাহানির পর্যায়ে নিয়ে যায়। স্বার্থ ত্যাগ করে লোভ সম্বরণ করে চলতে পারলেই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হে জনমণ্ডলী! তোমরা জুলুম থেকে বেঁচে থাকো। কেননা, এই জুলুম কেয়ামতের দিন জুলুম বা অন্ধকারের কারণ হবে। হে লোক সকল! তোমরা কার্পণ্য ও লোভ-লালসাকে ভয় করো, এটা এমন একটা জিনিস যা তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এরই কারণে তারা পরস্পরে খুনা-খুনি করেছে এবং হারামকে হালাল করে নিয়েছে। (সহিহ মুসলিম)।
দ্বীন পালনে আজীবন একমাত্র রাসূল (সা.) এর নির্দেশিত পন্থায় সব আমল চালিয়ে যেতে পারলেই ইহকাল ও পরকাল- উভয়কালেই মুমিন বান্দার জন্য প্রশান্তি রয়েছে এবং পরকালের প্রশান্তি তো অনন্তকাল ধরে চলবে, যেখানে আর কখনো মরতে হবে না।
সুতরাং যথাযথভাবে সহিহ-সুন্নাহ অনুসরণে একনিষ্ঠাভাবে কোনোরকম তারতম্য না করে দ্বীন পালনে ব্রতী হতে হবে। মহান আল্লাহর হুকুম পালনে যারা গাফেল, যারা মুশরিক, অলস নির্বোধ তাদের কাছে ইবাদত-বন্দেগি নিয়মিত ধারাবাহিকভাবে পালন করা খুবই কঠিন মনে হতে পারে। মহান আল্লাহকে যারা আন্তরিকভাবে ভয় করে, কেয়ামতের কঠিন ময়দানে বিচারের দিনের ফয়সালার প্রতি যারা বিশ্বাস রাখে তাদের কাছে এ সব আমল-ইবাদত একটুও কঠিন মনে হয় না। মুমিনের অন্তর মসজিদের দিকে সজাগ থাকে, সর্বদা মনের মধ্যে জাগরূক থাকে যে, আল্লাহ তাআলা তার সব ধরনের কার্যকলাপ সর্বক্ষণ অবলোকন করেছেন। ফলে গর্হিত কাজ, ফাহেশা‘আমল ‘ইবাদত থেকে বিরত থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلاَّ عَلَى الْخَاشِعِينَ
‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর নিশ্চয়ই তা অবশ্যই কঠিন- বিনীতদের ছাড়া।’(সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ৪৫)।
নিজের কাজকে,‘আমল-ইবাদতকে অনাবশ্যক সুন্নাহ বহির্ভূত অতিরঞ্জন করে আরো কঠিন না করে সহজ সঠিকভাবে কোরআন ও সুন্নাহ মুতাবেক পালন করতে পারলে প্রকৃত মুমিনের কাছে কিছুই কঠিন মনে হওয়ার কথা নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا وَمَا جَعَلْنَا الْقِبْلَةَ الَّتِي كُنتَ عَلَيْهَا إِلاَّ لِنَعْلَمَ مَن يَتَّبِعُ الرَّسُولَ مِمَّن يَنقَلِبُ عَلَى عَقِبَيْهِ وَإِن كَانَتْ لَكَبِيرَةً إِلاَّ عَلَى الَّذِينَ هَدَى اللّهُ وَمَا كَانَ اللّهُ لِيُضِيعَ إِيمَانَكُمْ إِنَّ اللّهَ بِالنَّاسِ لَرَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: ‘আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থি উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানব জাতির ওপর সাক্ষী হতে পারো এবং রাসূল হতে পারো তোমাদের ওপর সাক্ষী। এবং আমি সেটিকে কিবলা বানিয়েছিলাম- যার ওপর তুমি ছিলে, কেবল যাতে আমি জেনে নিতে পারি (স্পষ্ট করতে পারি), কে রাসুলের অনুসরণ করে, (আর) কে পেছনের দিকে (পূর্বাবস্থায়) ফিরে যায় এবং তা ছিল অবশ্যই কঠিন তাদের জন্য ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন। আর আল্লাহ এমন নন যে তিনি তোমাদের ঈমানকে নষ্ট করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের জন্য অত্যন্ত স্নেহশীল ও পরম দয়ালু।’(সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ১৪৩)।
মহামহিম আল্লাহ তাআলা তার বান্দার প্রতি অতীব করুনাময় বলেই কোনো ইবাদতকে কঠিন বা ভারী করেননি। পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সাওয়াব পাঁচ ওয়াক্ত আদায়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ তিনি দেবেন। সফরের সময় সালাত কসর করা যায়, অন্য সময়ে সিয়াম পালনের সুযোগ দিয়ে সফরে তা না রাখলেও চলে।
নারীদের নাপাকী-সময়ের সালাত মওকুফ করে দিয়েছেন তিনি। সব ধরনের ইবাদতকে পালনকারীর নিজের জন্যই কল্যাণকর করেছেন আল্লাহত তাআলা। শুধু তার কাছে আন্তরিকভাবে কায়মনোবাক্যে চাইতে হবে এবং প্রতিজ্ঞা করতে হবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে তাওবাহ করতে পারলে পাহাড় পরিমাণ পাপ-রাশি দয়াময় আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন বলে তিনি ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ তাআলা মানুষের সাধ্যতীত ভারী কোনো কিছু চাপিয়ে দেবার নন।
সুতরাং আসুন! আমরা সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে শপথ করি-উগ্রতা, সন্ত্রাস, জুলুম এর মতো উদ্ধত পথ, অন্ধকারের পথ থেকে ফিরে আসি। অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে আসি। অসীম দয়াময় মহান আল্লাহর কাছে প্রাণভরে তারই প্রেরিত বাণী আউড়িয়ে বলি,
وَقَالُواْ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
অর্থ: ‘এবং তারা বলে আমরা শুনলাম এবং আমরা আনুগত্য করলাম, আপনার ক্ষমা চাই, হে আমাদের প্রতিপালক! এবং গন্তব্যস্থল আপনারই দিকে।’ (সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫)
আরো বলি,
لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা যদি ভুলে যাই বা ভুল করি, আপনি (সে জন্য) আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেভাবে আপনি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর তা চাপিয়ে দিয়েছিলেন। হে আমাদের প্রতিপালক! যার সামর্থ্য আমাদের নেই, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেবেন না এবং আমাদেরকে মার্জনা করুন, আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন। আপনি আমাদের প্রভু (রক্ষক)। অতএব, কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আপনি আমাদেরকে সাহায্য করুন।’ (সূরা: আল বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬)।
ইয়া আল্লাহ! আমাদের সবাইকে মধ্যপন্থা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

- বালিয়াকান্দিতে পুষ্টি বাগানের উপকরণ বিতরণ
- নতুন ঘর পাচ্ছেন চরভদ্রাসনের একশ পরিবার
- রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে চরভদ্রাসনে থাকছে বাজার তদারকি
- একনেকে ৯ প্রকল্প অনুমোদন
- সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে তারাবি পড়ার আহ্বান
- নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মী নিতে চায় মালয়েশিয়া
- রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ একান্তভাবে প্রয়োজন : প্রধানমন্ত্রী
- ২০৩০ সাল পর্যন্ত সংরক্ষিত বনের গাছ কাটা যাবে না
- ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে আনতে কঠোর হচ্ছে বিএসইসি
- ঈদে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ৭ এপ্রিল
- গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে রাজশাহীর তিন জেলা ও ৩২ উপজেলা
- ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন
- ফরিদপুরে পরিত্যক্ত ভবনে চলছে পাঠদান, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
- টিকটকার খাবি লেমের প্রতি পোস্টে আয় কত জানেন?
- পাকিস্তানে রকেট হামলায় পিটিআই নেতাসহ নিহত ৮
- ‘বিশ্বে বহুমুখী ভূমিকা রাখছে চীন ও রাশিয়া`
- বিশ্বে করোনায় মৃত্যু বেড়েছে, কমেছে শনাক্ত
- তৃতীয় ওয়ানডের দল থেকে বাদ আফিফ-শরিফুল
- সোনার দাম ১৯৮৩ ডলার
- দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন মুশফিকের
- ৩-১ গোলে ফুলহ্যামকে উড়িয়ে দিলো ম্যানইউ
- আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে দুঃসংবাদ
- সেবা দ্রুত বাড়াতে ৯৯৯-এ যুক্ত হচ্ছে কলার লোকেশন ট্র্যাকার
- ফরিদপুরে বিনিয়োগের চেক পেলেন ৫০ কৃষক
- ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- সালথায় চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে পাট বীজ ও সার বিতরণ
- ফরিদপুরে পেঁয়াজের বীজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
- রাজবাড়ীতে নতুন করে ঘর পাচ্ছেন ২৭৭ গৃহহীন পরিবার
- পেঁয়াজ চাষে দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন রাজবাড়ীর কৃষকরা
- ৮ মাসে রাজস্ব আয় ১ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা
- ফরিদপুরের ১১ ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী হলেন যারা
- মাগুরায় ৩ দিনব্যাপী কৃষি মেলার শুরু
- বিষমুক্ত টমেটো চাষ করে কৃষক হারুনের অনন্য সাফল্য
- যে ফল খেতেও ভালো, মাখলেও ভালো
- মাগুরায় স্প্রে-ফগার মেশিন বিতরণ
- দৌলতদিয়ায় সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের জন্য লাইব্রেরি
- আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ: আইজিপি
- আরও ৫০ মডেল মসজিদ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
- মাকড়সা তাড়ানোর ঘরোয়া টোটকা
- ফরিদপুরে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত
- রামপালের জন্য দেশে এলো আরও ৩৩ হাজার টন কয়লা
- ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর
- রমজান উপলক্ষে রাজবাড়ী পৌর এলাকায় টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের দাবিদার বর্তমান সরকার: নিক্সন চৌধুরী
- চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচকে ঘিরে দুই ক্লাবের দাঙ্গা
- সাকিবের অভাব পূরণ করতে চান মিরাজ
- শাকিব খানকে ইঙ্গিত করে যা বললেন রোশান
- বিয়ে করার ঘোষণা দিলেন অভিনেতা সজল
- কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল
- মিয়ামি বিচে ঝড় তুলেছেন মৌনী

- কতটুকু প্রস্রাব লাগলে সে কাপড়ে নামায পড়া যাবে না?
- তাশাহুদ পড়ার সময় আঙুল উঠানামা করা মুস্তাহাব
- আল্লাহ যার ভালো চান তাকে দুঃখ কষ্টে ফেলেন
- যে দোয়াগুলো সালাম ফেরানোর আগে পড়বেন
- যে ১০ টি কাজ শয়তান করে
- ইমামতির মর্যাদা ও দায়িত্ব
- রোজার আধুনিক ৩১ মাসআলা
- কেন সুরা আল-ফাতিহা কোরআন শরীফের প্রথম সুরা
- কুরআন ও হাদীসের আলোকে জাহান্নামের চিত্র
- নবীজির সকাল-সন্ধ্যায় পঠিত দুআ
- বিশ্বনবী (সা.) এর ব্যবহৃত জিনিস-পত্র সংরক্ষিত যে জাদুঘরে
- যে সকল আমলে আল্লাহর প্রতি বাড়ে বান্দার ভালোবাসা
- চোখের জলে কবর ভেজাচ্ছে স্বজনেরা
- আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়ার বিষয়ে ইসলাম যা বলে
- হে আল্লাহ্! করোনায় হতাশা নয়, চাই তোমার দয়া