শনিবার   ০৩ জুন ২০২৩   জ্যৈষ্ঠ ২০ ১৪৩০   ১৪ জ্বিলকদ ১৪৪৪

 ফরিদপুর প্রতিদিন
সর্বশেষ:
কেঁচো সারে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন গ্রামের অর্ধশতাধিক নারী চার জেলায় বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ, ২ বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস সৌদি আরবে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের ৪৪ হাজার ১৫৬ হজযাত্রী করমুক্ত আয়সীমা পুরুষের সাড়ে ৩ লাখ নারীর ৪ লাখ টাকা রাজবাড়ীতে গড়ে উঠছে পারিবারিক পুষ্টি বাগান
৫৫

আওয়ামী লীগ এখন চাপমুক্ত

প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৩  

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকটাই ভারমুক্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। বিএনপি সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ায় টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ কিছুটা চাপ অনুভব করছিল। তবে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক এবং প্রধানমন্ত্রীর ত্রিদেশীয় সফরে সেই চাপ অনেকটা কেটে গেছে। সঙ্গত কারণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এখন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চিন্তামুক্ত বলে মনে করেন দলটির শীর্ষনেতারা।

দলটির শীর্ষনেতারা বলেন, বিগত দিনগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চেয়ে প্রায়ই বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছিল। এমনকি সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। রাতের ভোট ইস্যুতে কথা বলে জাপানও পরোক্ষভাবে সরকারকে খানিকটা চাপ দিতে চেষ্টা করেছিল। যেটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য-অবস্থানও একটি পক্ষের দিকে ছিল। ফলে এখান থেকে বেরিয়ে আসাই ছিল চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য। কিন্তু বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে সরকারের বৈঠক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্য দিয়ে অনেকটা চিন্তামুক্ত সরকার।

তারা আরও বলেন, বিদেশি চাপ বলতে ওইসব দেশের অনেক চাওয়া-পাওয়া থাকে। সেগুলো পূরণ করতে না পারলে, তখন তারা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চাপ প্রয়োগ করে। বাংলাদেশ নিজস্ব গতিতে চলছে।  

গত ১৪ বছর ধরে টানা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন অগ্রগতির সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকার ভালো অবস্থানে আছে। এখন পর্যন্ত যেভাবে আছে অভ্যন্তরীণ বা অন্য কোনো শক্তি চাপ প্রয়োগ করলেও কিছু হবে না। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। জাপান আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। তাদের সহযোগিতা অন্য দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি। যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলেও তা শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসবে না।

সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা ইতিবাচক ছিল বলে জানিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছিলেন, আলোচনায় নানা বিষয়ের মধ্যে একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েও নেই। তারা শুধু বলেছেন, সবার অংশগ্রহণে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। আমরাও চাই দেশে আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু বিএনপি এখন বিদেশেও বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। বিদেশিদের সঙ্গে লবিং করেও বিএনপি ব্যর্থ। একের পর এক বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশে এসেছেন এবং সরকারের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। কিন্তু তারা বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেননি। কূটনীতিকরাও বুঝতে পেরেছেন বিএনপির কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, তাদের কাছে দেশ কিংবা জনগণ নিরাপদ নয়। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য হাজারো তদবির করে ব্যর্থ হচ্ছে বিএনপি। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা গত ২৫ এপ্রিল থেকে জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ৯ মে দেশে ফেরেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রিদেশীয় সফরের ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য পথ অনেকটা প্রশস্ত হয়েছে। কেননা এ সফরে অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এটি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তুলতে উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, কৃষি, সাইবার সিকিউরিটি ও আইসিটি, শিল্প, রোহিঙ্গা সংকট, ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু, বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে উভয় পক্ষ। এ সময় দুই দেশের মধ্যে ৮ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। ২০০০ কোটি ডলারের বৃহৎ মহেশখালী-মাতারবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ নিয়ে কাজ করছে দুই দেশের সরকার।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ৩০ বিলিয়ন ইয়েন সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জাপান সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ এবং বৈশ্বিক ঋণদাতার মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারত্ব উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতর ওয়াশিংটন যান। এ সময় ৫ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি সই হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর একটি ছবি তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন যান। সেখানে তিনি যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য কমনওয়েলথ অঞ্চলের রাজা ও রানি হিসেবে তৃতীয় চার্লস ও তার পত্নী ক্যামিলার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোয় কমনওয়েলথের প্রতি আহ্বান জানান। এতে করে রাজনৈতিক সম্পর্কের মাত্রা উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ গুণগত নেতৃত্বের প্রমাণ দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, সব বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব আবারও প্রয়োজন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, সরকার কোনো বিদেশি চাপ অনুভব করছে না। বাংলাদেশ নিজস্ব গতিতে চলে। গত ১৪ বছর ধরে টানা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে। ফলে জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন চতুর্থবার সরকার গঠন করবে। এখন পর্যন্ত সরকার যে অবস্থানে রয়েছে, কোনো শক্তির চাপে কিছু হবে না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রিদেশীয় সফরের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি বা রাজনীতির ক্ষেত্রে অভাবনীয় অর্জন হয়েছে। বিএনপির ষড়যন্ত্রে কোনো লাভ হবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগের যে অর্জন এটা অভাবনীয়। ফলে আমরা আপাতত কোনো চাপ অনুভব করছি না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি যা কিছুই করুক না কেন? তাতে কিছু হবে না। বরং বিএনপি অনেকটা বুমেরাং হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রিদেশীয় সফরের পর। সম্প্রতি কমিউনিটি ক্লিনিকের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। এটি প্রধানমন্ত্রীর অর্জন। বিএনপি যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, শেষ পর্যন্ত বিশ্ব সম্প্রদায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষেই থাকবে। 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গে টাকা খরচ করে বিভিন্ন সময় লবিস্ট নিয়োগ করে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের এ সম্পর্কটা বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুব সহজেই লবিস্ট নিয়োগ করা সম্ভব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছে। এটা তাদের একটি প্রক্রিয়ার অংশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কিছুই করতে পারে না। ফলে অনেক রাষ্ট্রই বুঝে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করে। তাই এখন আর তারা চাইলেও কিছু করতে পারবে না। আর বাংলাদেশের সরকার ও আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে, তাদের ষড়যন্ত্র ও চাপ ধোপে টিকবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রিদেশীয় সফর সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর সুফল আগামী নির্বাচনে আসবে।

 ফরিদপুর প্রতিদিন
 ফরিদপুর প্রতিদিন
এই বিভাগের আরো খবর