শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

 ফরিদপুর প্রতিদিন
সর্বশেষ:
পর্যটন শিল্পের বিকাশে কুয়াকাটায় বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতে পরিকল্পিত শিল্পায়ন করতে হবে ফের আশা জাগাচ্ছে লালদিয়া চর কনটেইনার টার্মিনাল দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক সফটওয়্যারের আওতায় সব সরকারি চাকরিজীবী
৭৩০৩

দৌলতদিয়া পতিতাপল্লী এখন থেকে “দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া”

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০১৯  

অবশেষে নামের কলঙ্ক ঘুচলো দেশের সর্ববৃহত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পতিতালয়ের। এ পল্লীর যৌনজীবিরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানায় গ্রামের নাম দৌলতদিয়া পতিতালয় নাম বাদ দেয়ার জন্য দাবী জানিয়ে আসছিলেন। ঠিকানার বিড়ম্বনা নিয়ে ইতিমধ্যে কেটে গেছে তাদের ৪৭ বছর।
ঠিকানার কারণে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে বসবাসরত ১৩০৮ জন যৌনকর্মী নানাভাবে বিড়ম্বনা ও বঞ্জনার শিকার হয়ে আসছিলেন। শুধু নামের জন্য এখানকার ৬৪০ জন শিশুর ভবিষৎ ছিল অনিশ্চিত । অবশেষে গত ১৫ জুলাই সোমবার পতিতালয় গ্রামের নাম পরিবর্তন করেছে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে  বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে ইতোপূর্বে সংবাদ প্রকাশ হয়। যা মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে সারা ফেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডেও ০০৭২ কোডের ভোটার এলাকার নাম পরিবর্তন বিষয়ক একটি চিঠি আমাদের কাছে আসে। সেখানে দৌলতদিয়া ইউনিনের ভোটার কোড ০০৭২ অপরিবর্তিত রেখে “পতিতালয় (উত্তর দৌলতদিয়া) এর স্থলে “দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া ” নামকরণ করা হয়।
পতিতালয়ে নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে যৌনকর্মী নাসিমা বেগম জানান, আমরা কেউ পতিতা হয়ে জন্মাইনি। ভাগ্য বিড়ম্বনার শিকার হয়ে এখানে এসেছি। গ্রামের নাম হয়েছে পতিতালয়। আমরা সন্তানদের যখন বাইরের কোন স্কুলে ভর্তি করতে যাই তখন গ্রামের নাম শুনে ভর্তি নেয় না। তাছাড়া আরো বিভিন্ন নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
দৌলতদিয়া কেকেএস সরকারী শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলকিস বেগম জানান, এক সময় এই পতিতালয়ের কোন শিশুকেই কোন বিদ্যালয় ভর্তি নিত না। তখন সমাজসেবক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দৌলতদিয়ার পতিতাপল্লীর শিশুদের পড়ালেখার সুযোগ করে দেন। এই বিদ্যালয়ে যৌনপল্লীর ১৪৩ জন ছেলে মেয়ে পড়ালেখা করে। তিনি আরো বলেন নাম পরিবর্তনে ফলে এখানকার শিশুরা এখন থেকে দেশের যেকোন প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ পাবে।আর কোন বিড়ম্বনা থাকবে না।
দৌলতদিয়া পতিতালয়ের যৌনজীবি ও তাদের শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা মুক্তি মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা বেগম জানান, লজ্জাজনক ঠিকানার কারণে এতোদিন এখানকার নারী ও শিশুরা নানাভাবে বঞ্চনা ও লাঞ্চনার শিকার হয়ে আসছিল। দীর্ঘদিন পরে হলেও নামটি পরিবর্তন হয়ে দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া হয়েছে। এতে পল্লীর সবাই খুব খুশি। আমি এ জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রুবায়েত হাসান শিপলু জানান, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাদেরকে জানালে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে নাম পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করি। যেটা পরিবর্তন হয়ে আসছে। আগামী ২৫ জুলাই যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে সেখানে আর পতিতালয় গ্রাম নামে কোন যৌনকর্মী ভোট প্রদান করতে পারবে না । তারা এখন দৌলতদিয়া বাজার পূর্বপাড়া গ্রামের মানুষ।

 ফরিদপুর প্রতিদিন
 ফরিদপুর প্রতিদিন
এই বিভাগের আরো খবর